রিয়াজুল ইসলাম, নোয়াখালী প্রতিনিধি
নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বসবাসকারী প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের জীবনযাত্রা প্রতিদিনই কঠিন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌপথ হলেও, নিরাপদ নৌযানের তীব্র সংকট দীর্ঘদিন ধরে এই জনপদবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্ভর করতে হচ্ছে কাঠের তৈরি ছোট নৌকা ও মাছ ধরার ট্রলারের ওপর—যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রাণঘাতী।
সরকারি সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি (BIWTC) কর্তৃক অনুমোদিত একটি সি-ট্রাক থাকলেও ঘাট ইজারাদারদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে এটি নিয়মিত চালু থাকে না। ফলে যাত্রীরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হন। আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সরাসরি আন্দোলনের মাধ্যমে স্থানীয়রা তাদের দাবি জানালেও এখনো স্থায়ী কোনো সমাধান মেলেনি।
বিআইডব্লিউটিসি 'নিঝুমদ্বীপ' নামের একটি নতুন সি-ট্রাক দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ হাতিয়ার জনগণের জন্য ফেরি চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এক বছর পার হলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয়নি।
সাধারণ মানুষের লাগাতার আন্দোলনের মুখে ঘাট ইজারাদাররা অস্থায়ী সমাধান হিসেবে চেয়ারম্যান ঘাট–হাতিয়া রুটে দুটি লঞ্চ চালু করে। তবে কয়েকদিন চলার পর রহস্যজনকভাবে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যাত্রীদের আবারও অনিরাপদ নৌযান ও মাছ ধরার ট্রলারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকায় বসবাসরত হাতিয়ার শিক্ষার্থীরা ফেরি চালুর দাবিতে আন্দোলন করলে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। আন্দোলনের চাপে ঘাট ইজারাদাররা একটি ভাঙাচোরা, জরাজীর্ণ সি-ট্রাক নিয়ে আসে, যা কার্যত চলাচলের অনুপযোগী। এ ঘটনায় জনমনে হতাশা ও ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
হাতিয়ার সাধারণ মানুষ এখন সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য নৌযানের অভাবে এই অঞ্চলের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, জরুরি চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন—দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে প্রাণহানির আশঙ্কা প্রতিদিন বাড়ছে।